Saturday 23 September 2023

কেরল ভ্রমন গাইড - Kerala Tour Plan and Budget

স্থানীয় মানুষে কেরল কে বলে ভগবানের আপন দেশ বা God's own country, আর সেটা কেন বলে, কেরল ঘুরতে এলেই বুঝতে পারবেন। পাঁচ দিন অথবা ৮-৯ দিনে কি ভাবে কেরল ঘুরে দেখবেন, কোথায় থাকবেন ও খরচ কত হতে পারে, তার সম্পূর্ন তথ্য পাবেন এই ব্লগ থেকে। এটি কেরল ভ্রমন গাইড, ফলে সমস্ত জায়গা গুলির শুধুমাত্র মূল তথ্য টুকু তুলে ধরব। কোনো জায়গা সম্পর্কে বিশদে জানতে চাইলে সেই জায়গার vlog দেখে নিতে পারেন। 

Back water Travel


এই ভ্রমণ গাইডের ভিডিও লিংক: 



কেরল রাজ্যের ভৌগলিক অবস্থান

কেরল রাজ্য দক্ষিণ ভারতের সব চেয়ে দক্ষিণে আরব সাগরের কুলে অবস্থিত। এর পূর্বে রয়েছে তামিলনাড়ু রাজ্য। আবার কেরলের এর পশ্চিমে রয়েছে আরব সাগর আর পূর্ব দিকে পশ্চিম ঘাট পর্বতমালা। এই পর্বতমালা ও আরব সাগরের মধ্যেই রয়েছে সমতল ভূমি ও অনেক খাল এবং নদী। যদিও কেরলের পূর্ব পশ্চিম বলতে তেমন কিছুই নেই, রাজ্যটি পূর্ব পশ্চিম এর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৫০-১৭০ কিলোমিটারের মত। আর উত্তর দক্ষিণে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। এই সরু একটা রাজ্যের মধ্যেই রয়েছে এমন ভূপ্রকৃতির বৈচিত্র্য।


কেরল কি ভাবে পৌঁছাবেন

কেরল ভ্রমন এর জন্য  মধ্য কেরলের কোচিন অথবা দক্ষিণ কেরলের ত্রিবন্দম, যে কোনো শহর থেকেই শুরু করা যায়। এই দুটি শহরেরই কলকাতা বা ভারতবর্ষের যে কোনো বড়  শহরের থেকে প্লেন বা ট্রেন এ পৌঁছে যেতে পারেন।

কলকাতা বিমান বন্দর থেকে অনেকগুলি প্লেন প্রতিদিন কোচিন অথবা ট্রিবন্দম বিমান বন্দরে পৌঁছাচ্ছে। তবে এখানে প্লেনগুলি ব্যাঙ্গালোরে, হায়দ্রাবাদ অথবা চেন্নাই ঘুরে যায়।

কলকাতা থেকে পৌঁছানো যায় ট্রেন কোচিন ও ত্রিবন্ধম শহরে। সাত্রাগাছি থেকে ২২৬৪২ ট্রেনটি রাত্রি ১২:০৫ এ ছেড়ে পরের দিন দুপুর ৩:০৫ অর্থাৎ প্রায় দেড় দিন বাদে এর্ণাকুলাম পৌঁছায়। ট্রেনটি মঙ্গলবার ও রবিবার ছাড়ে। এছাড়া ১২৬৬০ ট্রেনটি প্রতি বুধবার রাত্রে ছাড়ে এবং সময় প্রায় একই লাগে। কোচিং থেকে আপনার ভ্রমন শুরু করতে এর্ণাকুলাম জংশন স্টেশনে নামতে হবে। 


কখন আসবেন

সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কেরল ঘুরবার জন্য ভাল। তবে শীতকালে কেরলের বেশিরভাগ জায়গা ঘুরবার জন্য সব চেয়ে ভাল। অর্থাৎ অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বর থেকে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি। তবে এই সময় পাহাড়ের জায়গাগুলো যেমন মুন্নার , থেক্কাদি এমন জায়গায় বেশ ঠান্ডা থাকবে। আর কেরলের অন্য সব জায়গা যেমন ব্যাক ওয়াটার, সমুদ্রের ধার এইসকল জায়গাটা ঘুরতে এই সময় খুবই ভাল।

অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী এই সময় আসলে ঠান্ডার ভারী পোশাক সঙ্গে আনবেন।


কেরল এর কোথায় কোথায় ও কি ভাবে ঘুরবেন

প্রথম দিন  - কোচিন শহর ভ্রমণ 

সকাল: আপনার দিন শুরু করুন ফোর্ট কোচি ঘুরে, এটি একটি ঐতিহাসিক পাড়া যা পর্তুগিজ, ডাচ এবং চীনা প্রভাবের মিশ্রিত এলাকা। সরু রাস্তাগুলি হেঁটে ঘুরে দেখুন, স্ট্রিট আর্ট দেখুন এবং এলাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ল্যান্ডমার্কে যেতে পারেন, যেমন চাইনিজ ফিশিং নেট, সান্তা ক্রুজ ব্যাসিলিকা এবং ম্যাটানচেরি প্যালেস।

বিকলে চলে যেতে পারেন মেরিন ড্রাইভ হেঁটে ঘুরবার জন্য। আমি নিশ্চিৎ আপনি একটা একটি নৈসর্গিক সন্ধ্যার সাক্ষী থাকবেন, আরব সাগরে সূর্যাস্ত সত্যিই অসাধারণ । আবার চাইলে আপনি ইন্দো-পর্তুগিজ মিউজিয়ামও দেখতে পারেন, যেখানে শহরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শন করে এমন নিদর্শন এবং প্রদর্শনীর সংগ্রহ রয়েছে।

মেরিন ড্রাইভ, কোচি

আরব সাগরে সূর্যাস্ত দেখে চলে জেনে পারেন ডিনারের উদ্দেশ্যে। কচি ফোর্টের সামনে অনেক রেস্তোরা পাবেন, সেখানেই রাত্রের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরতে পারেন।  আবার চাইলে কোচিতে কথাকলি নাচ ও মার্শাল আর্ট দেখতে পারেন।  তবে এইদুটি জিনিস আপনি ঠেকাড্ডি তে দেখতে পারেন।  যদি কম সময়ে কেরল ঘুরতে চান তবে এই কথাকলি না ও মার্শাল আর্ট এখানেই দেখুন এবং থেকাদ্দি ভ্রমন থেকে বিরত থাকুন তাতে আপনার একদিন সময় বাঁচবে। 


দ্বিতীয় দিন - কোচিন থেকে মুন্নার

পরের দিন সকালে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন মুন্নারের উদ্দেশ্যে।  কচি থেকে মুন্নার প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরত্ব আর সরাসরি এলে সময় লাগবে ৩.৫ - ৪ ঘন্টা মতো।  সরাসরি গেলে ট্যাক্সিতে প্রায় ৩৫০০-৪০০০ টাকা ভাড়া পড়বে।  তবে আমার সাজেশন হবে কচি থেকেই একটা গাড়ি কয়েকদিনের জন্য বুক করে নিন।  যে আপনাদের কয়েক দিনে সকল জায়গা ঘুরিয়ে আবার কোচিন ছেড়ে দেবে। সেক্ষেত্রে দিনের হিসাবে ভাড়া হবে।  গাড়ি ভাড়া বিষয়ে পরে বলছি।  

কচি থেকে মুন্নার যাবার পথে পড়বে কয়েকটি জলপ্রপাত, ফটো পয়েন্ট, মুটুপিটি ড্যাম, ইকো পয়েন্ট, কুন্ডলা লেক ও স্টিল ব্রিজ। সব জায়গাগুলি ঘুরে যেতে বেশ সময় লেগে যাবে। এক্ষেত্রে ড্রাইভারের সাথে আগে কথা বলে নেবেন।    


তৃতীয় দিন - মুন্নার ভ্রমণ 

মুন্নার যেন এক টুকরো স্বর্গ

মুন্নার একটা অসাধারন জায়গা. এখানের মূল দেখবার মত জায়গা এখানের প্রকৃতি. পুরো মুন্নার জুড়ে রয়েছে সবুজ চা বাগান. যে দিকেই তাকাবেন দেখতে পাবেন সবুজ চা বাগানে ঢাকা ঢেউ খেলানো পাহাড়. এই দৃশ্য অবশ্যই আপনাকে মুগ্ধ করবে. তবে এখানে নির্দিষ্ট করে দেখবার মত জায়গাগুলোর মধ্যে আমার মতে প্রথমেই এই চা বাগান আর তারপরেই আসবে মুন্নার যেন এক টুকরো স্বর্গ।  

এই পার্ক জুড়ে রয়েছে বহু ধরনের পশু ও পাখি. তবে এখানের বিশেষ পশুর মধ্যে রয়েছে নীলগিরি থর. এরা এক জাতীয় পাহাড়ি ছাগল, যারা পাহাড়ের গা বেয়ে অনায়াসে উঠে যেতে পারে বহুদূর. এই national park এ আপনার টিকিট কেটে, পার্কের বসে করে উপরে উঠে যেতে হবে. তার পর তারা আপনার নামিয়ে দেবে একটা জায়গায় আর সেখানের থেকে হেঁটে উঠে যেতে হবে এই পার্ক ঘুরে দেখবার জন্য. এই পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে হালকা জলধারা যা ছোট ঝর্নার সৃষ্টি করেছে, আর এখানের পাহাড়ের গায়ে মেঘের খেলা করা এক কথায় অসাধারণ. 

নিলকুরুঞ্জো ফুল প্রতি ১২ বছরে একবার। 

টিকিট : এখানে প্রবেশের জন্য টিকিট এর প্রয়োজন হবে।  টিকিটের দাম ভিডিওয়ের শেষে জানাচ্ছি।

মুন্নার যেন এক টুকরো স্বর্গ


অন্য জায়গা গুলির মধ্যে  

  • Giyapara waterfalls
  • Velara waterfalls
  • Munnar rose garden
  • Palivassel waterfalls
  • Chinna kavalam waterfalls
  • Ripple waterfalls

থাকার জায়গা 

আমরা ছিলাম : grace munnar নামক এক হোটেলে তবে আপনারা চাইলে মুন্নার বাজারের কাছেই থাকতে পারেন। এখানে অনেক হোটেল পেয়ে যাবেন।  

মুন্নার এ বিশেষ ভ্রমন চাইলে : অফ রোড মুন্নার দেখার জন্য জিপ গাড়ি ভাড়া নিতে পারেন।  এক্ষত্রে দিনপ্রতি আনুমানিক ৩-৪ হাজার এর প্রয়োজন হবে । মুন্নার ভালভাবে ঘুরবার জন্য দুই রাত্রি এক দিন। অর্থাৎ যে দিন কচি থেকে আসছেন তার পরের দিনটা ঘুরে রাত্রে থেকে তার পরের দিন সকালে পরের গন্তব্যে যেতে পারেন।  


Day ৪ -  মুন্নার থেকে থেক্কাদী - কথাকলি ও মার্শাল আর্ট

মুন্নার থেকে সকালে খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ুন থেককাদির উদ্দেশ্যে। আজ তৈরি থাকুন পথে দারুন সুন্দর সব দৃশ্য দেখবার জন্য। এই পথে চেন্নাই এক্সপ্রেস সিনেমার অনেকগুলি শুটিং হয়েছিল। ড্রাইভার আপনাদের যেতে যেতে সেসব জায়গার বেশি কিছু ঘুরিয়ে দেখাবে। চাইলে আপনিও গাড়ি থামিয়ে বেশ কিছু ছবি তুলে নিতে পারবেন। এই দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার।  আপনি চাইলে অনায়াসে তিন থেকে চার ঘণ্টা বা আরো বেশি সময় কাটিয়ে দিতে পারবেন এই রাস্তায়। চেষ্টা করুন দুপুরের আগে thekkadi পৌঁছানোনোর। রাস্তায় দেখে নিন spice garden। আর চাইলে কিছু মশলা কিনেও নিতে পারেন। 

Thakkadi বাজারে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন তারপর পারিয়ার লেক ঘুরবার টিকিট কেটে নিন, কারণ এই টিকিট খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। এর পরে হোটেলে চেক ইন করুন।  এই দিন সন্ধ্যায় দেখে নিন কেরলের ট্রাডিশনাল মার্শাল আর্ট ও কথাকলি নাচ। 

রাত্রে হোটেলে কাটিয়ে পরের দিন সকালে পেরিয়ার লেক ভ্রমন করুন । চাইলে পেরীয়ার লেকের ভেতরেই কেরল সরকারের হোটেলে রাত কাটাতে পারেন। 

ইচ্ছা হলে থেক্কাডিতে হাতি সাফারি করতে পারেন।  


Day ৫ - আলেপ্পি ব্যাক ওয়াটার 

ব্যাক ওয়াটারে হাউস বোট 

সকালে পেরিয়ার লেক ঘুরে বেরিয়ে পড়ুন আল্লেপি ব্যাক ওয়াটারের উদ্দেশ্যে। চাইলে এই দিন টা আল্লিপিতে হাউস বোট এ থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাদের পেরিয়ার লেক ভ্রমণ আগের দিন করে খুব সকালে থেক্কাডি থেকে আলেপ্পি এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তে হবে নইলে সকালে অল্লেপি পৌঁছাতে হাউস বোট এ পৌঁছেতে দেরি হয়ে যাবে। কারণ হাউস বোট চেক দিন সাধারণত সকাল ১০ টা নাগাদ শুরু হয়।  

Alleppey তে যদি হাউস বোটে  ঘুরবার প্ল্যান থাকে তবে হোটেল নেবার দরকার নেই। আর যদি শুধু সিকারা করে ব্যাক ওয়াটার ঘুরবার প্ল্যান করেন তবে thekkadi থেকে একটু দেরীতে বেরিয়ে Alleppey তে হোটেল চেক ইন করে দুপুরের পরেও সিকরা ঘুরে নিতে পারেন। হাউস বোট এর ক্ষেত্রে আপনাদের বোট এ থাকা ও তিন বারের খাবার ব্যবস্থা হবে। সেক্ষেত্রে খরচ পড়বে বেশি বেশি। দুই জনের ঘর ৬০০০ টাকা বা তার বেশি ধরে নিতে পারেন। পুজো ও পিক সিজিনে খরচ দুই জুন বা বেশি হতে পারে। তবে আপনাদের একত্রে আলাদা করে হোটেল বা খাবারের খরচ লাগছে না। আর সিকরা হলে তিন ঘণ্টায় প্রায় ১৬০০-২০০০ টাকা খরচ হবে শুধুমাত্র ঘুরবার জন্য। 

আর যদি খুব কম খরচে এই ব্যাক ওয়াটার ঘুরবার ইচ্ছা থাকে তবে কেরল সরকারের ওয়াটার বাস যা আসলে খাল ও নদীর মধ্যে সরকারি বোট সার্ভিস সেটা করে ঘুরে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে মাথা পিছু ১০০ টাকার কম খরচে হয়ে যাবে।  অবশ্য এই ভ্রমণ হাউস বোট বা শিকারের মতো উপভোগ্য হবে না।   


Day ৬ - বাড়ি ফেরা অথবা দক্ষিণ কেরলের দিকে ভ্রমণ 

Alleppey ঘুরে রাত্রে কোচিন থেকে ট্রেন বা প্লেন ধরে ফেরার পথ ধরতে পারেন। কেরলের সব চেয়ে জন্যপ্রিয় জায়গাগুলি ইতোমধ্যেই আপনি ঘুরে ফেলেছেন। আর যদি সময় ও বাজেট থাকে তবে এবার চলুন কেরল এর দক্ষিণ দিকে, যে ভ্রমন এবারে শেষ হবে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী তে। 

অথবা Alleppey থেকে এবারে কেরলের দক্ষিণ দিকে ধীরে ধীরে এগোতে থাকুন। এটা আপনারা গাড়ি নিয়ে করলেই ভাল ভাবে ঘুরতে পারবেন। Alleppey এর বোট হাউস চেক আউট হবে বেরিয়ে চলে আসুন ভারকালা বিচ। খুবই সুন্দর এই বিচ এর পাশে চাইলে যেকোনো হোটেলে একটা রাত্রি কাটাতে পারেন। এখানেই এই দিনের সূর্যাস্ত দেখে, বিচে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরে যান। 


Day ৭ - জটায়ু রক ও ট্রিবন্দাম যাওয়া

জটায়ু পাখির মূর্তির সামনে
ভারকালা হোটেল থেকে সকাল সকাল চেক আউট করে এবারে চলুন জাটায়ু রক দেখবার উদ্দেশ্যে। রামায়ণে বর্ণিত রাবণের ও জটায়ু পাখির যুদ্ধ কে স্বরণ করে এই পাখির মূর্তির তৈরী করা হয়েছে। আমার মতে এটা আধুনিক ভারতের সব চেয়ে সুন্দর ও পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে বড় পাখির মূর্তি। এই মূর্তির মাধ্যমে নারীর সম্মান রক্ষার্থের প্রয়োজনে জীবন ত্যাগ স্বীকারও যে করতে হতে পারে সেটাই এখানে বোঝানো হয়েছে। এই মূর্তিটি একটি পাহাড়ের মাথায় যেখানে কেবল কার বা রোপ way এর মাধ্যমে বা হেঁটে প্রায় ৮০০ সিড়ি ভেঙে পৌঁছাতে পারেন। এই মূর্তি এমন পাথর দিয়ে তৈরী যে দিনের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের আলোর প্রতিফলনে এর রং বদলায়।  

জটায়ু রক দেখে চলে আসুন ট্রিবন্দম শহরে। এটি কেরলের রাজধানী শহর। এখানের যে কোনো হোটেলে চেক ইন করে চাইলে বিকালে ঘুরে নিন এখানে বিখ্যাত শ্রী পদ্মনাস্বামি মন্দির। এই মন্দিরে ভোর ৩:৩০ থেকে দুপুর ১ টা ও বিকালে ৫ টা থেকে রাত্রি ৮:৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। সকালে জটায়ু রক ঘুরে অনায়াসে বিকালে এই মন্দির ঘুরে নিতে পারবেন। আর যদি পরের দিন সকালে এই মন্দির ঘুরতে চান তবে আগের দিন কোভালাম বিচ গিয়ে সন্ধ্যা কাটিয়ে পরের দিন এই মন্দির ঘুরে নিন। তাতে অবশ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার উল্টো দিক অর্থাৎ উত্তর দিক ফিরতে হবে। তবে আমার মতে অবশ্য সেটাই উচিত হবে। কারণ কোভালাম বিচ খুবই সুন্দর একটা জায়গা যেখানে আরব সাগরের পাড়ে ছোট পাহাড় এর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এখানে রাত্রে ডিনারে স্থানীয় সামুদ্রিক মাছ ভাজা অবশ্যই টেস্ট করবেন। এতে একটু খরচ হলেও বিষয়টা খুবই উপভোগ্য। 


কোভালাম সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্ত

Day ৮ - পদ্মনাস্বামি মন্দির ঘুরে কন্যাকুমারী পথে 

এই দিন সকালে চান করে, যথাযথ পোশাক পরে শ্রী পদ্মনাস্বামি মন্দির ঘুরে নিন। খেয়াল রাখবেন এই মন্দিরে কিন্তু জিনস বা আধুনিক পোশাকে প্রবেশের অনুমতি নেই। এখানে এলে ধুতি বা শাড়ি জাতীয় পোশাক পরে আসবেন। সকালে মন্দিরে পুজো দিয়ে আবার বেরিয়ে পড়ুন দক্ষিণ দিকের উদ্দেশ্যে। আজ আমাদের যাত্রা শেষ হবে ভারতবর্ষের একেবারে সর্বশেষ দক্ষিণের স্থান কন্যাকুমারীতে । পথে যেতে যেতে চাইলে পূর্ভার ব্যাক ওয়াটার সাফারি ঘুরে নিতে পারেন। দুই থেকে তিন ঘণ্টায় এই সাফারি করে নেয়া সম্ভব। জল-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এই নৌকা ভ্রমণ আপনার কেরল ভ্রমণকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে যাবে।  দুপুর নাগাদ এখানে পৌঁছে বিকালের আগেই সাফারি করে সন্ধার আগে চলে যান কন্যাকুমারী। 

সন্ধ্যার আগে কন্যাকুমারী পৌঁছাতে পারলে চলে যান sunset পয়েন্টে থেকে ভারত মহাসাগরের বুকে এক অসাধারণ সূর্যাস্ত দেখবার জন্য। 

আপনারা যদি এই পর্যন্ত গাড়ি রিজার্ভ করে ঘুরে থাকেন তবে কন্যাকুমারী পৌঁছে গাড়ি ছেড়ে দিতে পারেন, কারণ কন্যাকুমারী ঘুরবার জন্য লোকাল গাড়ি বা অটো নিলেই কম খরচে ঘুরতে পারবেন। 


Day ৯ - কন্যাকুমারী ঘোরা ও বাড়ি ফেরা 


কন্যাকুমারীতে বিবেকানন্দ মেমোরিয়াল রক 

কন্যাকুমারী তে এই দিন  সকালে উঠেই চলে যান সূর্যোদয় দেখবার জন্য। সকালে সূর্যোদয় দেখেই তারপর চলে আসুন বিবেকানন্দ মেমোরিয়াল রক দেখবার জন্য। মাথায় রাখবেন বিবেকানন্দ রক দেখবার জন্য খুবই লম্বা লাইন হয়। এখানের  সাধারণ টিকিট ৫০ টাকা, আর তাড়াতাড়ি চাইলে special টিকিট ২০০ টাকায় কেটে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে যাবার সময় আপনার খুব লম্বা লাইন দিতে না হলেও ফিরবার সময় সাধারণ লাইন দিয়েই ফিরতে হবে। খুব সকালে এখানে লাইন দিলে হয়ত বেশি সময় লাগবেনা।   যদিও এখানে সাধারণত খুবই ভিড় হয়।  সপ্তাহ শেষে বা ছুটির দিন খুবই লম্বা লাইন হয়ে থাকে।  এমন দিনে ঘুরবার জন্য আমাদের প্রায় তিন ঘন্টা লাইনে দাড়াতে হয়েছিল। 

কন্যাকুমারী এর বাকি জায়গা ঘুরবার জন্য হোটেল থেকে ট্রাভেল বাস এর টিকিট নিয়ে নিতে পারেন। তারাই আপনাকে অর্ধ দিবস ঘুরবার প্ল্যান করে দেবে। এতে সব জায়গায় ঘুরেও নিতে পারবেন আবার খরচও কম হবে। 

সারাদিন ঘুরে রাত্রে বা পরের দিন ভোরে কন্যাকুমারী থেকে বাড়ি ফিরবার ট্রেন ধরতে পারেন। 

কন্যাকুমারী থেকে ভোরে ছেড়ে সরাসরি হাওড়া যাবার ট্রেন পাবেন আবার অনেক ট্রেন via চেন্নাই বা মাদুরাই হয়ে হাওড়া পৌঁছায়। IRCTC থেকে ট্রেনের তথ্য পেয়ে যাবেন। 


মোট খরচ

যে কোনো ভ্রমণের খরচ কত হতে পারে এটা বলা খুবই কঠিন কারণ প্রত্যেকের পছন্দ আলাদা। তবে কি করলে কম খরচে ঘুরতে করবেন ও কত খরচ হতে পারে তার একটা ধারণা দেবার চেষ্টা করছি। নিম্নলিখিত খরচ ২০২৩ এর, আপনি প্রতি বছর হিসাবে ৫%~৭% বেশি খরচ ধরতে পারেন। গাড়ি , হোটেল, খাবার এর খরচের একটা ধারণা দিচ্ছি যার থেকে আপনি নিজেই খরচ হিসাব করে নিতে পারবেন।  

কেরলের মত এত দূরে ঘুরতে এলে ভাল ভাবে প্ল্যান করে নিন। চেষ্টা করুন একটু বড় টিম তৈরি করবার। কেরল এ গাড়ি ভাড়া করে ঘুরলেই ভাল ঘুরবেন ফলে মাথায় রাখুন প্রাইভেট গাড়িতেই ঘুরবেন। তাছাড়া বেশিরভাগ জায়গায় পাবলিক গাড়ি সময় মতো পাবেন না ফলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট করে ঘোরা সম্ভব হবে না।  


গাড়ী খরচ 

প্রাইভেট ছোট গাড়ি হলে ৪ জন, এর চেয়ে বড় টিম হলে ৬ জন বা ৮ জন আর আরো বেশি লোক হলে ১২ বা ১৫ জনের টিম তৈরি করুন। এখানে ছোট গাড়ি ৫ সিট  বা ৭ সিটের ইনোভা বা ertiga বা ৯ সিটের বেলোরো গাড়ি পাওয়া যায়। এর চেয়ে বড় গাড়ি হল ছোট ট্রাভেল বাস গুলি। বাস ও ইনভা গাড়ির ভাড়া খুব একটা আলাদা নয় কিন্তু বড়ো টিমে বাস নিলে মাথা পিছু খরচ কম পড়বে। ৫ সিটের গাড়ি প্রতি দিন কমবেশি ৩০০০-৩৫০০ টাকা ও ৭ সিটের গাড়ি ৪৫০০-৫০০০ টাকা পড়বে। আরো বড় গাড়ি হলে খরচ আরেকটু বেশি হবে। আপনার কত দিনের ভ্রমন সেই হিসাবে গাড়ির খরচ বের করে নিতে পারবেন। যদি গাড়ি নিয়ে কন্যাকুমারী যান তবে কেরল থেকে তামিলনাড়ু যাবার জন্য পারমিট বাবদ কিছু টাকা বেশি দিতে হবে।


হোটেল খরচ

গোটা কেরল বিভিন্ন মানের হোটেল পাবেন।  তবে যে কোনো জায়গায়  দুই রুমের হোটেল ১৫০০-২০০০ টাকা দিন প্রতি ধরুন। এটা আমি এসি হোটেলের ভাড়া বললাম, যদি নন এসি চান তবে ১২০০-১৫০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। অবশ্য প্রাইম লোকেশন মানে সমুদ্রের বিচ এর একেবারে পশে হোটেল নিতে গেলে আরো বেশি ভাড়া গুনতে হবে। 

কন্যাকুমারী তে হোটেলের খরচ বেশ কম, এখানে চাইলে ৭০০-৮০০ থেকেই নন এসি হোটেল পেয়ে যাবেন। এসি  হোটেল ১৫০০-২০০০ এর মধ্যে পাবেন । 

Alleppey তে দুই রুমের বোট হাউস ভাড়া অফ সিজনে ৫০০০-৬০০০ টাকা দিন প্রতি হবে । কিন্তু এই খরচ দূর্গা পুজোর সময় বা ২৫ শে ডিসেম্বরে অনেক বেড়ে যায়, সেসব সময় ভিড় অনুসারে ১৫,০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে, এরপরও রুম পাওয়া সমস্যা হতে পারে। ফলে পুজোর সময় এলে অবশ্যই আগে বোট ভাড়া করবেন। অন্য সময় স্পট বুকিং এ কম খরচে পেতে পারেন আবার হটাৎ অনেক ডিমান্ড হলে বেশি ভাড়ার দরকার হতে পারে। তবে গোটা বছরই সোম থেকে বৃহস্পতি বারে তুলনামূলক ভাবে কম ভাড়া হয়।  


খাবার 

খাবারের খরচ পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার পছন্দের ওপরে। কেরলের ভেজ থালি খুবই সুস্বাদু। থালি ১০০-১২০ টাকায় পাওয়া যায়। সকালে কেরলের স্থানীয় খাবার যেমন ধোসা - ইডলি জাতীয় খেলে ৭০-১০০ টাকায় হয়ে যাবে । রাত্রে খাবার আবার ১২০-১৫০ টাকায় পেয়ে যাবেন। এটা সর্বনিম্ন খরচ। এবারে নন ভেজ আপনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। তবে সব মিলে এক জনের  প্রতি দিন ৭০০-৮০০ টাকায় খুবই ভাল ভাবে পছন্দ মতো নন-ভেজ খাবার হয়ে যাওয়া উচিত। 

Alleppey ও kovalam এ স্পেশাল সি ফুড খাবার জন্য মাথা পিছু আরো ৩০০ টাকা এক্সট্রা ধরে রাখবেন। 


বিভিন্ন জায়গার  টিকিট খরচ 

কচি 

কচি টিকিট ফোর্ট  ও অন্য জায়গার জন্য মাথা পিছু ১০০ টাকা ধরুন।  

মুন্নার

এরাভিকুকাম national park এ ভারতীয়দের জন্য টিকিট খরচ ২০০ টাকা ও ক্যামেরার জন্য ৫০ টাকা, ভিডিও ক্যামেরার জন্য ৩৫০ টাকা লাগবে ।  ছোটদের হাফ টিকিট লাগবে।  

Thekkadi

মার্শাল আর্ট ৪০০ টাকা

পেরিয়ার লেক - বড় দেড় ২২৫ টাকা , ছোটদের ৭৫ টাকা।

Alleppey

যদি হাউস বোট এর খরচ আগেই বলেছি আর যদি  শিকারা নিয়ে ঘুরবার প্ল্যান করেন , তিন ঘন্টার জন্য ১২০০-১৮০০ টাকা পড়বে। পিক সিজিনে আরো বেশি লাগাতে পারে। 

জটায়ু রক

জটায়ু রকের টিকিট ও কেবল কার এর টিকিট ৫৫০ টাকা 

পূর্বার সাফারি

তিন ঘন্টার সাফারির জন্য ২৫০০-৩০০০ টাকা ধরতে পারেন। 

কন্যাকুমারী

বিবেকাননদ মেমোরিয়াল রক ৫০-২০০ টাকা 

বাস করে অর্ধ দিবস ভ্রমন - মাথা পিছু ৩৫০ টাকা 


ব্লগ সম্পর্কে আপনার মতামত কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ।

ব্যাঙ্গালোরের সেরা ১০টি ঘুরবার জায়গা, Top 10 tourist places in Bangalore

 ব্যাঙ্গালোর এর সেরা ১০ টি ঘুরবার জায়গাগুলি - লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন : এই উদ্যানটি ব্যাঙ্গালোরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই উদ্যা...