লেখাটি কেমন লাগল দয়া করে কমেন্টে জানাবেন। আমার ভ্রমণের Youtube চ্যানেল Bhromon India
"খোকা ঘুমালো | পাড়া জুড়ালো | বর্গী এলো দেশে"
1700 খ্রিস্টাব্দে (প্রায়) বাংলায় বর্গী আক্রমণে অশান্ত হয়েছিল। বর্গীদের আটকিয়ে বাংলায় শান্তি ফিরিয়ে এনেছিলেন বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। সুষ্ঠ শাসনের স্বার্থে তিনি বাংলার তৎকালীন রাজধানী ঢাকা থেকে সরিয়ে বাংলার প্রায় কেন্দ্রে নিয়ে আসেন, ভাগীরথী নদীর তীরে। এর পর তিনি তার রাজধানীর নাম নিজের নামের সাথে মিলিয়ে করে দেন মুর্শিদাবাদ (1703 দ্বিমত 1704)। আর এই মুর্শিদাবাদ এই ইংরেজদের সাথে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাংলা তথা গোটা ভারতবর্ষ ধীরে ধীরে ইংরেজদের অধীনে চলে যায়। এই শহরের প্রতিটি কোনায় আজও ছড়িয়ে আছে জানা অজানা নানা ইতিহাস। এই ইতিহাস জানতে একবার ঘুরে আসা নবাবদের এই শহরে।
সংক্ষেপে বিশেষ তথ্য
কি ধরনণের ঘুরবার জায়গা: ঐতিহাসিক
বছরের কখন ঘুরতে যাওয়া যায়: যে কোনো সময়। তবে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ গরম কম হবার ফলে ঘোরা আরামদায়ক হয়।
কত সময় প্রয়োজন ঘুরবার জন্য: অন্তত দুই দিন
কাছের বড় শহর: বহরমপুর
কিভাবে যাওয়া যায়: ট্রেন, বাস , প্রাইভেট কার
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কিভাবে যাবেন, include travel time and cost
ট্রেন : কলকাতা (শিয়ালদহ) থেকে হাজার দুয়ারী, লালগোলা সহ অনেক ট্রেন যাচ্ছে বহরমপুর বা মুর্শিদাবাদ। সিট রিজার্ভ করে বা টিকিট কেটে উঠে পড়তে পারেন। সময় লাগবে প্রায় 3.5 থেকে 4.5 ঘন্টা।
বাস : ধর্মতলা অথবা এয়ারপোর্ট থেকে বাসে আসতে পারেন বহরমপুর বা মুর্শিদাবাদ এ। সময় লাগবে প্রায় 6 ঘন্টা।
গাড়িতে : নিজের গাড়িতেও আসতে পারেন মুর্শিদাবাদ এ। প্রায় 220 কিলোমিটার রাস্তা, সময় লাগবে প্রায় 6 ঘন্টা। রাস্তায় মায়াপুর, চুপির চর ঘুরে নিতে পারেন। কলকাতা থেকে বারাসত, হয়ে উত্তর বঙ্গ রোড ধরতে পারেন বা গঙ্গার পশ্চিম দিকের রাস্তাও নিতে পারেন। গুগলের সাহায্যে পৌঁছে যাবেন।
প্লেন : কলকাতা থেকে প্লেন যোগাযোগ নেই।
কি দেখবেন
হাজারদুয়ারী
মুর্শিদাবাদ এর দ্রষ্টব্য স্থানগুলোর মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য হল হাজার দুয়ারী। এই রাজপ্রাসাদ টির স্থাপনা করেছিলেন নবাব হুমায়ুনজা। এটি তৈরি করতে প্রায় 8 বছর (1829-1837) সময় লাগে ও মোট খরচ 17 লক্ষ টাকা। এখানে 1000 টা দরজার মধ্যে 900 টি আসল ও 100 টি নকল। বর্তমানে এটি একটি সুন্দর মিউজিয়াম যেখানে তৎকালীন বহু জিনিস যেমন নবাব এর ব্যবহার এর জিনিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছবি, আসবাবপত্র ও যুদ্ধের অস্ত্র রাখা আছে।
এটি খোলা থাকে সকাল 9 টা থেকে বিকাল 5 টা পর্যন্ত। করোনার জন্য টিকিট অনলাইনে কাটতে হচ্ছে। টিকিট মূল্য 20 টাকা। ভেতরে ছবি তোলা নিষেধ এবং ক্যামেরা সহ প্রবেশের অধিকার নেই। মোবাইল সুইচ বন্ধ করে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যায়।
ইমামবাড়া
হাজার দুয়ারীর সামনেই আছে ইমামবাড়া। অবশ্য এখানে প্রবেশের অধিকার নেই, বাইরে থেকেই দেখে নিতে হয়। আর এই দূরত্বের মধ্যেই আছে ঘড়ি বাড়ি ও কামান।
হাজার দুয়ারীর সামনে থেকে ইমামবাড়া।
মতিঝিল
মতিঝিল মুর্শিদাবাদের অন্যতম আকর্ষণ। এখানে সাউন্ড ও ভিডিও এর মাধ্যমে বাংলার ইতিহাস দেখানো হয় যা অবশ্যই দেখা উচিত। এই শো দিনে ৩ বার হয় তবে যদি বেশি দর্শক না থাকে তবে শেষ বার দেখানো হয় না। বিকাল ৪:৩০ মিনিট নাগাদ প্রথম শো হয়। বিকাল এ মতিঝিল ঘুরবার জন্য অনবদ্য। এখানে প্রবেশের জন্য টিকিট লাগে এবং ভিডিও শো এর জন্য আলাদা টিকিট লাগে। দুটি টিকিট মিলে খরচ মোট ৫০ টাকা মতো।
জগৎ শেঠের বাড়ি
জগৎ শেঠ ছিল ইংরেজ আমলের শুরুর আগে বাংলা তথা ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যাবসায়ী। এক সময় বাংলার নবাব এনার থেকে ধার নিতেন বিভিন্ন প্রয়োজনে। জগৎ শেঠ ছিল ওনার উপাধি। ইনি মীরজাফর এর সাথে ষড়যন্ত্র করে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে সিরাজ দৌল্লাকে হারিয়ে বাংলার দখল বিদেশিদের হাতে যেতে সাহায্য করেছিলেন। এনার এই ষড়যন্ত্র হয়েছিল জগৎ শেঠের এই বাড়িতে। এই জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। টিকিট ৪০-৫০ টাকা।
কাঠ গোলাপের বাগান বাড়ি বা কাঠগোলা বাগানবাড়ি
এই বাড়িটির নাম নিয়ে দ্বিমত আছে। অনেকে বলে এটা কাঠ গোপালের বাগানবাড়ি আবার অনেকে কাঠগোলা বাগানবাড়ি বলে। হয়ত কাঠ গোলাপ নামই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়ে কাঠগোলা হয়েছে। যাই হোক ইটা অন্যতম সুন্দর জায়গা অবশ্যই যেতে পারেন। ঘুরে দেখতে কমবেশি ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগবে এবং টিকিট ৩০ টাকা (২০২০) .
এই বাগানবাড়ির মালিক জৈন ব্যাবসায়ী গোষ্ঠী এবং এখানে আছে একটা জৈন্য মন্দির।
নসিপুর রাজবাড়ীর চান্দার রথ
কাটরা মজজিদ
জাহানকোষ কামান
এটি মুর্শিদাবাদের সব চেয়ে বড় কামান। খুব বেশি শব্দের কারণে এই মাত্র একবারই ব্যবহার হয়েছিল।
সিরাজের সমাধী
মুর্শিদাবাদ গিয়ে অনেকেই সিরাজের সমাধি না ঘুরেই চলে আছে। একেবারেই এমন ভুল করবেন না। সিরাজের সমাধি না দেখলে মুর্শিদাবাদ এর মূল ইতিহাসই বাদ পড়ে যাবে। হাজার দুয়ারী বা অন্য সব কিছুই ইংরেজ আমলে তৈরি এবং প্রাক ইংরেজ যুগের। সিরাজের সমাধী খোশবাগে যা গঙ্গার অপর পারে। নৌকা বা ভুটভুটি করে গঙ্গা পার করে একটু হেটে পৌঁছে যেতে পারেন এই জায়গায়। নৌকা ভাড়া ৪০-৫০ টাকা।
খোশবাগ যাবার পথের দৃশ্য
খোশবাগে সিরাজ দৌল্লার সমাধি চত্বরে বাচ্ছারা খেলা করছে
স্বাধীন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ দৌল্লার সমাধি
কোথায় থাকবেন
মুর্শিদাবাদে থাকবার জন্য বহু হোটেল আছে। দিন প্রতি ভাড়া ৭০০-৮০০ থেকে ২০০০-২৫০০ টাকায় পেয়ে যাবেন। ১০০০-১২০০ টাকার হোটেল বেশ ভাল। হাজার দুয়ারীর কাছে ও অনেক হতে পাবেন। ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকার মত।
কোথায় খাবেন
গোটা মুর্শিদাবাদে বহু খাবারের হোটেল আছে। আমরা দুপুরের খাবার হাজার দুয়ারীর পেছনে ঢাকা হোটেল ও হিন্দু হোটেলে খেয়েছিলাম। সবজি ভাত থালা ৬০ টাকা। বেশ ভাল খাবার।
কখন যাবেন ও কিভাবে ঘুরবেন
মুর্শিদাবাদ বছরের যে কোনো সময় যেতে পারেন। তবে গরমের কারণে পুজোর সময় থেকে শীত কালে গেলে বেশি ভাল লাগবে।
টাঙ্গায় চড়ে ঘুরছি আমরা, হাজার দুয়ারী এর কাছেই ভাড়া পাবেন
হাজার দুয়ারীর পাশের সকল জায়গায় ঘুরবার জন্য টোটো বা ঘোড়ায় টানা গাড়ি নিতে পারেন। গাড়িই আপনার প্রায় সকল জায়গা ঘুরে দেখাবে। খরচ পড়বে ৪০০-৫০০ টাকা। তবে সিজিন বিশেষ পরিবর্তন হতে পারে। জায়গা গুলি ভাবে ভাবে জানবার জন্য গাইড নিতে পারেন। তারা ভালভাবে বুঝিয়ে দেবে।
এই ভ্রমণের ভিডিও দেখবার জন্য আমার youtube চ্যানেল এ দেয়া ভিডিও গুলি দেখে নিতে পারেন।