Saturday 6 April 2024

ব্যাঙ্গালোরের সেরা ১০টি ঘুরবার জায়গা, Top 10 tourist places in Bangalore

 ব্যাঙ্গালোর এর সেরা ১০ টি ঘুরবার জায়গাগুলি -



  1. লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন : এই উদ্যানটি ব্যাঙ্গালোরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই উদ্যানটি 240-একর জুড়ে রয়েছে এবং 1,800 টিরও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। এই উদ্যানে একটি গ্লাসহাউস, একটি হ্রদ এবং অনেকগুলি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। প্রতি বছর, ২৬শে জানুয়ারি ও ১৫ অগাস্ট উপলক্ষ্যে বছরে দুইবার ফুলের শো অনুষ্ঠিত হয় যা সাধারণত এক সপ্তাহ ব্যাপী চলতে থাকে। এই ফুলের শো উপলক্ষ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে ভিড় জমায়। বোটানিক্যাল গার্ডেন সর্বসাধারণের জন্য প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে।নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখার সব সময় ভাল সময়।বাগানে, মোবাইলে ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফির অনুমতি থাকলেও সাধারণ বা ডিজিটাল ক্যামেরা, ট্রাইপড এবং জিনিস যা বাগানের উদ্ভিদ জীবনের ক্ষতি করতে পারে  এমন কিছু নিয়ে প্রবেশের অনুমতি নেই।  দর্শনার্থীরা বাগানে খাবার বা পানীয় বাইরে থেকে আনতে পারবে না তবে এই বাগানের ভেতর কিছু অনুমোদিত স্টলের থেকে খাবার কিনে খাওয়া যাবে। এছাড়া বাগানের প্রবেশপথের বাইরে অনেকগুলি  খাবার ও পানীয়ের স্ট্যান্ড রয়েছে। ২০২৪ সালে এই উদ্যানের প্রবেশমূল্য ভারতীয় নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি 25 টাকা। বিদেশীদের জন্য জনপ্রতি 300 টাকা। গ্রীন লাইন মেট্রোর লালবাগ স্টেশনে নেমে হেটে এই উদ্যানে পৌঁছাতে পারবেন।  জয়নগর বা বনশঙ্করি যাবার বাস গুলি এই গার্ডেনের ৪ টি প্রবেশদ্বারের যেকোনোটির পাস দিয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে এখানে এলে প্রবেশ দ্বারের সামনেই পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে. তবে ফুলের শো এর কয়দিন অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এই পার্কিং বন্ধ থাকে।
  2. বান্নেরঘাটা জাতীয় উদ্যানব্যানারঘাটা জাতীয় উদ্যান, ব্যাঙ্গালোরে কেন্দ্র থেকে থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা দূরে অবস্থিত প্রায় ২৬১ স্কোয়ার কিলোমিটার জুড়ে থাকা এক বিশাল জাতীয় উদ্যান।  এই জাতীয় উদ্যানের মূখ্য আকর্ষণ হল:
    • সাফারি: এখানে সিংহ এবং বাঘের সাফারি আছে।  এখানে প্রাণীদের জঙ্গলে ছেড়ে রাখা আছে আর পর্যটককে একটা গাড়িতে করে সেইসব জায়গা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। জায়গাটায় আপনি প্রচুর হরিণ , রয়েল বেঙ্গল টাইগার , সাদা বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ , হাতি, বিভিন্ন ধরণের সাপ  আরো  অনেক জন্তু-জানোয়ার দেখতে পাবেন।    
    • চিড়িয়াখানা: এখানে একটি চিড়িয়াখানা আছে, যেখানে ৪৮ প্রজাতির প্রাণীদের রয়েছে। 
    • জীববিজ্ঞান শিবির: এখানে একটি জীববিজ্ঞান শিবির রয়েছে, যেখানে একটি বাটফ্লাই গার্ডেন বা প্রজাপতি উদ্যান রয়েছে।  
 উদ্যানটি মঙ্গলবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯:৩০ থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা।  সাফারির সময় ১০ থেকে ৪:৩০, দুপুরে লাঞ্চের জন্য ১ ঘন্টা বন্ধ থাকে । প্রবেশ মূল্য আপনি কিভাবে সাফারি করবেন তার পর নির্ভর করে।  সাধারণ বাস , এসি বাস গাড়ি, জিপ এসব নিয়ে ঘুরে দেখতে পারবেন। মাথাপিছু টিকিট ১৪০ টাকা থেকে  শুরু।  জিপ সাফারি হলে ৩৫০০ টাকা লাগবে। শহরের বিভিন্ন জায়গাথেকে এখানে পৌঁছানোর বাস পাবেন।  তাছাড়া গাড়ি বা অটো ভাড়া করেও পৌঁছে যেতে পারেন।   

  • ৩. স্নো সিটি বা বরফের শহর : বেঙ্গালুরে কৃত্তিম ভাবে তৈরী বরফের থিম পার্ক রয়েছে।  এটি একটা ইনডোর পার্ক।  গরমের মধ্যেও আপনি যদি বরফের মজা নিতে চান তবে অবশ্যই এই জায়গাটা ঘুরে নিতে পারেন।  এখানে কৃত্তিমভাবে তৈরী স্নো ফল বা  তুষারপাতের মজা নিতে পারবেন আবার স্নো রাইড বা পাহাড়ে উঠবার আনন্দও নিতে পারবেন।  এখানে রয়েছে একটি স্নো ডান্স ফ্লোর।  সম্পূর্ণ জায়গাটির তাপমাত্রা থাকে  হিমাঙ্করে নিচে।  জায়গাটা জে সি নগরে যা প্রায় শহরের প্রাণকেন্দ্রে। স্নো পার্কার টিকিট ৫০০ /৬৫০/৭৫০ টাকা করে।   স্নো সিটি প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। 
  •  বিধান সৌধ 
  • ওয়ান্ডারলা অমুউন্সমেন্ট পার্ক / ফান ওয়ার্ল্ড 
  • কুবন পার্ক 
  • বেঙ্গালুরু প্যালেস
  • জোহর লাল নেহেরু প্লানেটোরিয়াম
  • ইস্কন মন্দির 
  • চার্চ স্ট্রিট - সেন্ট মার্ক ক্যাথিড্রাল 
  • টিপু সুলতান ফোর্ট এন্ড প্যালেস 

Saturday 20 January 2024

নারকেল দ্বীপ বা সেন্ট মেরি দ্বীপ | St. Mary's Islands



মালদ্বীপ নাকি লাক্ষা দীপ এই বিতর্কের আবহে ঘুরে এলাম কর্ণাটকের নারকেল দ্বীপ বা সেন্ট মেরি দ্বীপ।  কর্ণাটকের উপকূলের শহর ম্যাঙ্গালোরের থাকে ৬০ কিলোমিটার দূরের মন্দির শহর উদুপি।  এই উদুপির মালপে বিচের থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে আরব সাগরের মধ্যে রয়েছে এই ছোট্ট নারকেল দ্বীপ বা সেন্ট মেরি দ্বীপ। দৈঘ্যে ৫০০ মিটার ও প্রস্থে ৩০০ মিটার ও সমুদ্রের থেকে মাত্র ১০ মিটার উঁচু এই দ্বীপে নেই কোনো বালির সমুদ্রতঠ। এই দ্বীপে নেই কোনো মানুষের বসবাস। 

১৪৯৮ সালে ভাস্কো দা গা মা ভারত আসবার সময়ে দীর্ঘ জলপথ অতিক্রম করে ভারতবর্ষের উপকূলের এই দ্বীপটি দেখতে পায়।  যীশু খ্রিস্টের মা মেরির নাম অনুসারে তিনি এর নাম দেন সেন্ট মেরি আইল্যান্ড।  এই দ্বীপে প্রচুর নারকেল গাছ থাকার ফলে এর আরেকনাম নারকেল দ্বীপ। 

ঘুরবার জন্য এই দ্বীপ খুবই সুন্দর।  মালপে বিচ থেকে প্রতি ২০ মিনিটে মোটর বোট ছাড়ে এখানে যাবার জন্য। আসা যাওয়ার জন্য মাথা পিছু টিকিট ৪০০ টাকা।  প্রায় ২৫-৩০ মিনিট লাগে এইখানে পৌঁছাতে।  তারপর এক ঘন্টা ঘুরে আবার ফিরে আসা যায় এই মোটর বোট করে।  সকাল থেকে শুরু করে বিকাল সাড়ে ৩ টায় শেষ বোট এই দ্বীপে যাবার জন্য মালপে থেকে ছেড়ে যায়। 


আমরা টিকিট কেটে উঠে পড়লাম এমন একটা বোটে বা ইঞ্জিন নৌকায়।  বেশ কিছুটা জলে নেবে এই নৌকায় উঠতে হল।  তারপর শুরু হল এই দুর্দান্ত যাত্রা। আরব সাগরের সবুজ জলরাশি চিরে এই বোট চলল দূরে অস্পষ্ট এক জায়গার উদ্দেশে।  এই নৌকা গুলি যখন জল চিরে চলছিল, জল যেন লাফিয়ে উঠে ছুটে আসছিলো আমাদের ওপরে।  ক্রমেই হালকা একটা বিন্দুর মতো জায়গা পরিষ্কার চেহারা নিলো।  সময়ের সাথে সাথে স্পষ্ট হল এই দ্বীপ। দূর থেকে দেখতে পেলাম নারকেল গাছ গুলিকে।  কিছুক্ষন বাদেই দ্বীপের উপকূলে নামলাম আমরা, আবার জল ভেঙে ডাঙায় উঠতে হলো।  দ্বীপ থেকে ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ডই যেন দিগন্তে মিলিয়ে গিয়েছে, দেখা যাচ্ছে হালকা একটা সাদা দাগ।  

দ্বীপটির ভেতরে কয়েক পা এগোলেই দেখা পেলাম পাথরের সব থাম বা পিলার।  নোটিস বোর্ড জানাল  এই দ্বীপটি ভারতের ন্যাশনাল জিওলজিকাল মনুমেন্ট তকমা পেয়েছে এর ভূপ্রকৃতির জন্য।  এই ভূপ্রকৃত ভারত বর্ষে আর কোথাও নেই।  জানলাম এমন পাথরের থাম রয়েছে পৃথিবীর সামান্য কিছু জায়গায় যেমন কাছাকাছির মধ্যে উত্তর পশ্চিম ইউরোপের আয়ারল্যান্ড এ।  



দ্বীপটি তৈরী হয়েছে আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে আজ থেকে ৬০ মিলিয়ন বছর বা ৬ কোটি বছর আগে।  লাভার থেকে এই দ্বীপে তৈরি হয়েছে অসংখ্য থাম বা পিলার।  আর সব পিলারগুলো যেন পুরো দ্বীপটিকে মোজাইক এর মতো সাজিয়েছে। আরো আশ্চর্যের এই পিলারগুলো সাধারণত ষড়ভুজ বা বহুভুজ আকৃতির, যা প্রকৃতিতে বিরল। দ্বীপটি ভারতবর্ষের সাথে সমান্তরালে অবস্থিত।  বিজ্ঞানীরা  দ্বীপের এই পাথরগুলি থেকে আবিষ্কার করেছেন যে ভারতবর্ষ এক সময় আফ্রিকার মাদাগাস্কার দেশের সাথে যুক্ত ছিল।  



পায়ে পায়ে আমরা এগিয়ে চললাম দ্বীপের ভেতরের দিকে।  চার দিকে জঙ্গল আর তারপরই অসংখ্য নারকেল গাছ।  এই দ্বীপে কোনোদিন মানুষের বসতি তৈরি হয়নি।  নেই কোনো বড় প্রাণী।  কিছু পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে এই দ্বীপের আকাশে। কতৃপক্ষ মাঝে মাঝে মানুষের বসে বিশ্রামের ব্যবস্থা করে রেখেছে। আমরা হাটতে হাটতে অল্প সময়ের মধ্যেই চলে এলাম দ্বীপের অপর দিকে।  এই দিক পুরোটাই পাথরে ঢাকা, নেই সামান্যতম সমুদ্রতঠ।  তবে আশ্চর্যের এখানে পেলাম শামুক ও ছোট ঝিনুকের অসংখ্য শেল বা খোল।  এই ছোট খোল গুলিই যেন সমুদ্র তঠ তৈরি করেছে।  


সূর্যের তাপ এতক্ষনে একটু কমেছে, সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাস বেশ আরামের। আমরা বেশ কিছুক্ষন কাটিয়ে , অনেক ছবি তুলে বিশ্রাম নিলাম এই দ্বীপে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য পাথরের কোনো একটির পরে বসে।  পাশে কাজু গাছের মতো একটা গাছ দেখে কাছে গিয়ে দেখলাম অন্য কোনো গাছ, যা আগে কখনো দেখিনি।  হয়তো এই দ্বীপের নিজস্ব কোনো উদ্ভিত , হয়তো সুদূর মাদাগাস্কার দেশের সাথে মিল আছে এর।  
একটু দূরে রয়েছে আরো বেশ কিছু উঁচু পাথর।  সরকারি নির্দেশ সেসবের পরে যেন কেউ না ওঠে।  তবে বেশ কিছু অতুৎসায়ী ভ্রমণ পিপাসু তার ওপরে উঠেই দ্বীপের মজা নিতে ব্যস্ত।  তবে এই দ্বীপের শুরুতেই নোটিস বোর্ডের মাধ্যমে সরকার  সকলকে সাবধান করে দিয়েছে এই দ্বীপের বিপদ সম্পর্কে যা লুকিয়ে রয়েছে এই লাভার তৈরী পিলারের মতো পাথরগুলির মধ্যে।  এর ধার গুলি যেন ব্লেডের মতো আর কোথাও ১০ ফিট উঁচু তো কোথাও নিচু।  এসব পাথরের ওপরে উঠে একটু ভুল হলেই হতে পারে বড়ো কোনো বিপদ।  



এসব দেখতে দেখতে আমাদের এক ঘন্টা প্রায় শেষ হয়েছে, ফলে ফিরবার পথ ধরলাম। পথে দেখলাম নারকেল কাছের ওপরে সমুদ্র চিলের বাসা।  দ্বীপের গেটের কাছে আসতেই ডাক পেলাম তাড়াতাড়ি বোটে চড়ে বসবার।  ফিরবার সময় নৌকার মাঝি টিকিট দেখতে চাইল। ভ্যাগিস সেটা গুছিয়ে রেখেছিলাম নইলে হয়তো নৌকায় উঠতেই দিতো না।  

গোটা দ্বীপে ছিল না কোনো বাথরুমের ব্যবস্থা বা জল পান বা কোনো খাবারের ব্যবস্থা।  ফলে এখানে যাবার আগে এসব জিনিসগুলি নিজেকেই ব্যবস্থা করে যেতে হবে।  


তখন সময় প্রায় বিকাল ৫ টা।  হয়তো এটাই ফিরবার শেষ নৌকা। এবার নৌকায় বেশ ভিড়।  কোথাও বসবার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েই থাকতে হলো।  কিছুক্ষনের মধ্যেই  মোটরের নৌকা বীর বিক্রমে  জল চিরে আবার চলল ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ডের উদ্দেশ্যে।  সুন্দর এই দ্বীপটি ধীরে ধীরে আবার ছোট হতে হতে এক সময়ে মিলিয়ে গেল দিগন্তে। দূর থেকে বড় নারকেল গাছে সারি এক একটা বিন্দুতে পরিণত হল।  তারপর সেটাও আর দেখা গেল না।  একটু পরেই নৌকা পৌছালো  মালপে সমুদ্র সৈকতে।  এর সাথে সাথে আমাদের এই সন্দুর সেন্ট মেরি আইল্যান্ড বা নারকেল দ্বীপ ভ্রমণ সম্পূর্ণ হল।   




Thursday 30 November 2023

বাংলার বাইরে আরেক বাংলা


নদীডোবাবিলমাছধানক্ষেতে - বাংলা বললে এমনই এক দৃশ্য আমাদের মনে ভেসে ওঠে।  এমন জায়গা যেখানে গ্রামের পাস দিয়ে বয়ে যাবে নদী বা অন্তত একটা খাল। সেই খালের জলে থাকবে মাছ।  আর  জল শুকিয়ে গেলে  দিগন্ত  বৃস্তিত মাঠে ধান ক্ষেতের ওপরে দিয়ে বয়ে যাবে কোমল হাওয়াসেই হাওয়ায় সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ঢেউ উঠবে ধানের খেতে। গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে থাকবে ধানের  গোলা আর বৃষ্টির সময় যাতায়াতের জন্য থাকবে নৌকা।  মানুষের খাবারের পাতে থাকবে অন্তত একটা মাছ আর ভাত।  বাংলার এই রূপ চির পরিচিত।  অবশ্য এই সকল জিনিস যে শুধু বাংলায় নয় , তার বাইরেও আছে সেটা বুঝেছিলাম ভারতবর্ষের একেবারে দক্ষিণে আরব সাগরের পাড়ে থাকা একটা জায়গায়। আজ বলব সেই ঘুরবার গল্পযা আমাকে ভীষণ ভাবে অবাক করেছিল।  তারই সাথে এও বলব যে এমন এক জলা জায়গা কিভাবে ভারত সহ গোটা পৃথিবীর কাছে অন্যতম জন্যপ্রিয় ভ্রমন গন্তব্য উঠল  মানুষের আয়ের একটা প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ালো।  এই গল্প বাংলার বাইরে আরেক বাংলার গল্প।   


ভারতবর্ষের দক্ষিণে অবস্থিত কেরল রাজ্যের আলেপ্পিকেরলের প্রধান দুটি  জন্যপ্রিয় জায়গা এর একটি। কেরল রাজ্য যা আছ্ ভারতের একেবারে দক্ষিণের ভারত মহাসাগরের থেকে শুরু করে আরব সাগর ঘেসে উত্তরে প্রায় সাড়ে পাঁচশ কিলোমিটার জুড়ে থাকা এক ছোট রাজ্য। এই রাজ্য লম্বায় সাড়ে পাঁচশ কিলোমিটার হলেও চাওড়াতে মোটেই বলবার মতো কিছু নয় , সব থেকে মোটা জায়গাটাও  মাত্র ১২৫ কিলোমিটার মতো।  অথচ এই অল্প জায়গার মধ্যেই আছে আশ্চর্য ভূপ্রকৃতিপূর্বে সুউচ্চ পাহাড় , আর পশ্চিমে আরব সাগর।  এরই মাঝে এক চিলতে সমতল জায়গা। এই ছোট জায়গার ভূপ্রকৃতি এতটাই সুন্দর যে এখানে মানুষরা এই রাজ্যকে বলে ঈশ্বরের নিজের দেশ।  মৌসুমী বায়ু যখন ভারতে আসেপ্রথমেই এই পাহাড়ে ধাক্কা খায় আর এখানে হয় প্রচুর বৃষ্টি।  এই জল ধারা ধীরে ধীরে পাহাড় থেকে নেমে চলে আসে সমতলেতৈরি করে অসংখ্য নদী - খাল - বিল।  কিন্তু এই জল প্রাকৃতিক কারণে পুরোটা সমুদ্রে চলে যেতে পারেনাসমতলে আটকে থেকে তৈরি করে জলা জায়গাযাকে বলে ব্যাক ওয়াটার।   সমতলের নিচু জায়গা গুলি প্রতি বছর এই জলে ডুবে যায়।  তৈরি হয় মানুষের জল যন্ত্রনা। অবশ্য জল যন্ত্রণাকে আর বর্তমান বলা যায়নাএমনটা আগে হতো কিন্তু বর্তমানে এই জলই এদের ভাগ্য খুলে দিয়েছে।    আলেপ্পি এমনই একটা যায়গা যেখানে প্রায় ১৫-২০ টা গ্রাম নিয়মিত বৃষ্টির সময়  চলে যায় জলের নিচে। বাকি সকল জায়গার সাথে থাকেনা স্থল পথে কোনো যোগযোগ ব্যবস্থা , নৌকাই একমাত্র যাতায়াতের ব্যবস্থা। আমাদের যেমন সাইকেল - মোটর সাইকেল বা গাড়ি থাকে , ওদের থাকে হাতে টানা ছোট নৌকা বা ডিঙি - মোটর দেয়া নৌকা - শিকারা,  বিশাল বড়ো নৌকা বা হাউস বোট।  এই হাউস বোটের মধ্যে থাকে বেশ কয়েকটি ঘর , রান্নার জায়গা , বাথরুম , এসি , জেনারেটার আরো কতকি!  আবার এখানে চলে জল -বাস , আমাদের যেমন রাস্তায় বাস চলে , এখানে চলে বড় মোটর নৌকা , যাকে বলে জল-বাস।  


---------------


আমরা এই জায়গায় পৌঁছেছিলাম গাড়িতে করে।  অবশ্য চাইলে ভারতের যেকোনো জায়গা থেকে ট্রেনে এই আলিপ্পি চলে আসা যায়।  তারপর অটো বা টুকটুক ধরে চলে যায় হাউস বোট ভাড়া নেবার জায়গায়। এখানে যদি অন্তত এক রাত্রি থাকার প্ল্যান থাকে তবেই অবশ্য হাউস বোট নইলে ছোট নৌকা যাকে এখানে শিকারা বলেসেই জন্য কয়েক ঘন্টার জন্য ভাড়া নিয়ে ঘুরে নেয়া যায় এই গ্রাম গুলো। যদি হাউস বোট হয় তবে আপনার এখানেই থাকা  খাবারের ব্যবস্থা করবে। পুরোদিন নদীর অলি - গলি ঘুরিয়ে রাতে কোথায় দাঁড়িয়ে যাবে আবার সকালে ঘুরিয়ে আপনায় ছেড়ে দেবে যেখানে থেকে আপনার যাত্রা শুরু হয়েছিল। অবশ্য তারজন্য বেশ কিছু পয়সা গুনতে হবে। এই যেমন সিজিন হিসাবে দিনে   থেকে ১৫ হাজার ভারতীয় টাকাথাকা  খাবার এর মধ্যেই   ফলে যদি একটু সস্তায় ব্যাপারটা উপগভোগ করবার ইচ্ছা থাকে তবে শিকারা আছেই।  - ঘন্টার জন্য ভাড়া নিয়ে গ্রাম গুলির আলী-গলি ঘুরে নিন।  এতে অবশ্য মাত্র ১২০০-২৫০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে। অবশ্যই শুধু ঘোরা। 


আমাদের পকেটে টান কম তাই শিকারার জয় বলে উঠে পড়লাম একটায়। তিন ঘন্টা ঘুরে দেখাবে।  আমাদের মাঝি মাইকেল। স্থানীয় এক গ্রামের লোক।  এই নৌকা চালিয়েই তার দিব্যি সংসার চলে। সিজিনে  দিনে গড়ে দুই - তিন  বার কাস্টমার পেয়ে যায়। মানে দিনের শেষে - হাজার আয়।  অবশ্য এই নৌকা গুলি হাতে টানা নয়।  মোটরে চলে ফলে তেলের খরচ আছে।  আর নৌকা নিজের না হলে তার ভাড়াও গুনতে হয়।  যাইহোক দিনের শেষে তবু কম করেও কয়েক হাজার আয় হয়ে যায়।  এই জন্যই বলেছিলাম এদের এই জল আজ সৌভাগ্যের।  মাইকেল দিব্যি একটা সরু খালের মধ্যে দিয়ে নিয়ে চলল আমাদের নৌকা।  মৃদু বাতাস আর খালের চারিদিকে নারকেল ঘেরা  গ্রামের দৃশ্য সত্যিই মনো মুগ্ধকর।  কিছুটা গিয়ে পড়লাম একটা বড় বিলে।   ব্যাপারটা যেমন গলি থেকে এসে কোনো একটা বড় মাঠের মধ্যে এসে পড়েছি।  সেখানে আবার সরকার  সুন্দর একটা বসবার জায়গায় করে দিয়েছে। সেখানে ডাবচা  অন্য সব খাবারের দোকান। বেশ মজার , চারিদিকে জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে ডাব বা চা যা ইচ্ছা খাও।  ওদেরও সকলে  মিলে মিশে বেশ ভাল আয়ের ব্যবস্থা। 


কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে আবার চলল আমাদের নৌকা।  এবার খালের ভেতর দিয়ে যেতে মাইকেল গল্প বলছিলতাদের গ্রামের গল্প। আগে এক সময় এই গ্রামগুলিতে বন্যার জলে ডুবে যেত আর মানুষের থাকবার বা খাবারের ব্যবস্থা থাকতো না। জিজ্ঞাসা করলাম , আগে ডুবে যেত মানে কি এখন ডুবে যায় না ? হেসে দেখাল অদ্ভুত একটা জিনিস। আমরা খালের যে জলের ওপর দিয়ে যাচ্ছি সেটা পাশের গ্রামের মানুষের বাড়ির প্রায় ছাদের সমান উঁচুতে।  খালের রয়েছে উঁচু বাধ। এই বাঁধ বা পাঁচিল গ্রামগুলিকে জল থেকে রক্ষা করছে।  আর গ্রামের খালি জায়গায় হয়েছে সুন্দর ধানের খেতযার ওপর দিয়ে  হাওয়া খেলে যাচ্ছে তৈরী করছে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো সব ঢেউ।   


এই খাল গিয়ে মিশেল আরেকটা বড়ো খালে। এখানে দেখলাম জল-বাস  হাউস বোট গুলি ভেসে চলেছে।  ব্যাপারটা যেন একটা গলি এসে একটা পাকা রাস্তায় মিলছে আর সেখানে চলছে বড়ো বাস - গাড়িআগের গ্রামটা শেষ করে আবার একটা বড়ো বিল।  তারপর আরেকটা খালে ঢুকে এগিয়ে যেতেই মাইকেই দেখালো তার বাড়িটি। ছোট কিন্তু বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো।  উঠানে বেশ কিছু ফলের গাছ।  যদিও মাটি এই  খালের জলের থেকে এক মানুষ নিচুতে।  পাশেই আরেকটা গ্রাম। গ্রামগুলি আলাদা হয়েছে এই সকল খালের মাধ্যমে।  নেই কোনো ব্রিজ নেই সাঁকো।  আছে প্রতিটা বাড়ির সামনে হাতে টানা নৌকা আর মোটর দেয়া অন্তত একটা নৌকা।  এই নৌকাই এদের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম।  গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম এখানে সব বাড়িই পাকা , নেই কোনো কাঁচা বাড়ি। অনেক বাড়ি আবার দুই তোলা।  সেসব বাড়ির মাঝে মাঝে আছে ছোট সবজি বা মুদির দোকান।  অবশ্য মাছ এর দোকান দেখলাম না।  দরকারও নেই , মাছ তো খালে আছেই যত ইচ্ছা ধরে নাও।  এসব ভাবতে ভাবতে এসে পড়লাম বিশাল বড়ো আরেকটা নদীতে।  এটা যেন হাই ওয়ে বা রাজপথ।  আবারো আরেকটা গ্রাম।  এতক্ষনে খেয়াল করলাম আগের প্রতিটা গ্রামে চার্চ বা মজ্জিদ থাকেও মন্দির দেখিনি।  এই গ্রামে আছে মন্দির।  আসলে এই কেরলে হিন্দু - মুসলিম-খ্রিস্টান সকল মানুষের বাস।  নেই কোনো মারামারি নেই দাঙ্গা।  এবার নৌকা ভিড়ল একটা হোটেলে।  আবারো নদীর পশে একজনের বাড়িতেই হোটেল।  আছে সদ্য ধরে আনা বিভিন্ন ধরণের মাছ।  ব্যবস্থা বেশ সুন্দর , কাঁচা মাছ ওজনে কেনো আর একটু বসলেই ফ্রেশ মাছ পরিষ্কার করে দারুন ভাবে ভেজে দেবে খাবার জন্য। আমরাও ৯০০ টাকায় এক কিলো স্থানীয় এক ধরণের মাছ কিনলাম। এটা দেখতে কিছুটা তেলাপিয়া  পমফ্রেট এর মতো।  গরম গরম এই মাছ ভাজাএকেবারে অতুলনীয়। খিদে কারো পাইনি তাই আর ভাত খেলাম না।  কিছুক্ষন এখানে কাটিয়ে আবার উঠে বসলাম মাইকেলের শিকারায়।  প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে গিয়েছে , এবার আমরা ফিরব। এই ফিরবার পথে চেয়ে রইলাম ওই সকল খালে - বিলে ঘেরা নারকেল গাছের আড়ালে থাকা গ্রামের দিকে। ভাবলাম পাহাড়ের বৃষ্টির যে জল এই সময় এই সকল মানুষকে প্রতি বছর বন্যায় ফেলে সর্বশান্ত করে ছাড়তোসেই সকল জলকেই নিয়ন্ত্রণে এনে কি সুন্দর চাষের কাজ , মাছের ব্যবস্থা আর ভ্রমণের উপযুক্ত এক ব্যবস্থা করেছে যা কিনা গোটা ভারত তথা গোটা পৃথিবীর কাছে অন্যতম এক আশ্চর্যের  জনপ্রিয় গন্তব্যএই জল এখানের মানুষকে আজ সব দিকথেকে সম্মৃদ্ধ করছে।  ১০০শিক্ষিত এই জায়গায়  নেই কোনো দারিদ্রতা , নেই কোনো ধমীয় বিবাদসদাহাস্য এই সকল মানুষ আজ নিজেদের চেষ্টায় এই প্রতিকূল জায়গাকে বানিয়ে তুলেছে অন্যতম সেরা।  আজ এটা সত্যিই   Gods own country  - ঈশ্বরের নিজের দেশ।

ব্যাঙ্গালোরের সেরা ১০টি ঘুরবার জায়গা, Top 10 tourist places in Bangalore

 ব্যাঙ্গালোর এর সেরা ১০ টি ঘুরবার জায়গাগুলি - লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন : এই উদ্যানটি ব্যাঙ্গালোরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই উদ্যা...